বোল্ড লুক, আধুনিক পোশাক, ঝরঝরে ইংরেজি পার্নো মিত্র বলতে এই ছবিটাই সকলের মাথায় আসে। কিন্তু নিজেকে ভেঙে বার বার ব্যতিক্রমী চরিত্রে নজর কেড়েছেন নায়িকা ‘অপুর পাঁচালী’ থেকে ‘বনবিবি’, ‘ধর্মযুদ্ধ’ নানা ছবিতে নানা লুকে ধরা দিয়েছেন নায়িকা। ছক ভাঙতে তিনি ওস্তাদ। তাই এবার ফের নিজেকে একেবারে ভেঙে ডি-গ্ল্যাম লুকে 'ভোগ'-এর পিশাচিনী ‘ডামরি’ হয়ে পর্দায় ধরা দিতে চলেছেন পার্নো! তাঁর মধ্যে লুকিয়ে থাকা আবেগ দিয়ে কীভাবে এই চরিত্রকে তৈরি করেছেন নায়িকা, সে কথাই হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে ভাগ একান্ত সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিলেন পার্নো।
পর্দায় ‘ডামরি' হতে গিয়ে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল নায়িকাকে? প্রশ্নে পার্নোর উত্তর, ‘পরিচালকের (পরমব্রত চট্টপাধ্যায়) একটা দিক তো ছিলই। তিনি কীভাবে চাইছেন, কীভাবে ভাবছেন চরিত্রটা? 'ডামরি'-এর মননটা কীভাবে কাজ করছিল সবটাই পরম বলেছিল। সেগুলো মাথায় রেখেছিলাম। তবে এই ধরনের চরিত্রের কোনও রেফারেন্স তো চাক্ষুষ করা সম্ভব হয় না। ‘পিশাচিনী’র কথা গল্পে শোনা যায় বা কোথাও পড়তে পারি। সেটাই মাথায় রেখে, খানিকটা নিজের মতো করে চরিত্রটাকে তৈরি করেছি।'
পার্নোর মতে প্রতিটা মানুষের মধ্যেই এমন কিছু কিছু ইমোশন থাকে যার বহিঃপ্রকাশ তাঁরা কারুর সামনে করেন না। অভিনেত্রীও তার ব্যতিক্রম নন। নিজের ভিতরে জমে থাকা সেই সব আবেগ দিয়েই 'ডামরী'কে জীবন্ত করে তুলেছেন নায়িকা। তাঁর কথায়, ‘আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কিছু কিছু ইমোশন থাকে যেগুলো আমরা সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারি না। নিজের খুব ভালো বন্ধু বা মা-বাবার সামনেও তা আনতে পারি না। সেগুলো আমদের মনেই জমে থাকে। আমি সেগুলো দিয়েই ডামরি চরিত্রটাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। একদিকে সে খুব সহজ-সরল একজন মহিলা, অন্যদিকে, এই সারল্যের আড়ালে লুকিয়ে একটা রহস্য সেটা যতটা সম্ভব আমি আমার কাজের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’
পাশাপাশি নায়িকা এও জানান যে এই চরিত্রটা তাঁর ম্যানিফেস্টের ফল। কীভাবে? তা বলতে গিয়ে ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলেন নায়িকা। তাঁর কথায়, ‘ছোটবেলায় মা কোন দিন সে ভাবে গল্প শোনায়নি। কিন্তু ছুটিতে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন বাবা বা পিসি কাছে থেকে প্রচুর গল্প শুনতাম। সেই সময় আমি ভূতের গল্প শুনে ঘুমাতে যেতাম। শেষ দু’বছরে আমার ঘুমের একটু সমস্যা দেখা দেয়। সেই সময় আমি অডিয়ো স্টোরি শোনা শুরু করি। সেই সূত্রেই আমি ‘ভোগ’ শুনি। এই গল্পটা আমার খুবই প্রিয়। আমার মনে হচ্ছিল যে বাংলায় যদি কেউ ‘ভোগ’ বানায়। তাহলে আমার দেখার সুযোগ হবে, সেখানে যে অভিনয় করবই তেমনটা ভাবিনি। তবে অভিনেত্রী তো তাই সেই জায়গা থেকে এটাও মনে হয়েছিল যে, ডামরির চরিত্রটা করতে কিন্তু বেশ মজা লাগবে। মানে এরকম ধরনের সচরাচর তো পাওয়া যায় না। চট করে পিশাচিনীর চরিত্রের ডাক আসে না। তো সেই জায়গা থেকেই বলেছিলাম যে, ম্যানিফেস্ট করে পাওয়া চরিত্র।'
সিরিজে পিশাচিনী হয়ে ইতিমধ্যেই তিনি দর্শকদের মনে বেশ ভয় ধরিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজে কি ভয় পান ভূতে? এই প্রশ্নে নায়িকা জানান ভূত নয়, বরং ভবিষতে ভয় পান তিনি। তাঁর কথায়, ‘ভূত নয়, আমি মানুষ ভয় পাই। ভূতের ভয়টা অনেকটা সেই রকম যে আমি একটা জিনিস যা জানি না সেটা নিয়ে ভয় পাওয়া। সেটা আমার ভবিষ্যৎও হতে পারে। কালকে কী হবে আমরা জানি না। ভয়টা ওখানেই। কিন্তু ভূতের ভয় কীভাবে পেতে হয় তা আমি খুব একটা জানি না। তবে হ্যাঁ ভূতের সিনেমা দেখতেন খুব ভালোবাসি। প্রচুর ভূতের সিনেমা দেখি, দেখে ভয়ে চিৎকারও করি। ওটাই আমার ভালো লাগে। ওটাই আমাকে উৎসাহী করে তোলে।’
কিন্তু ভূত না হলেও জীবনে তো এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। নায়িকা কী তেমন কোনও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি তাঁর পরিবারের একটা ঘটনা তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, ‘একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেটা ভৌতিক ঘটনা ওভাবে বলা যায় না। ২০১৩ সালে আমার বাবা মারা যান। আমার বাবার নিয়মভঙ্গের দিন আমার পিসিও মারা যান। এই পিসিকে বাবা তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। সেই ঘটনায় দাদু বাবার উপর খানিক রেগে গিয়েই প্রশ্ন করেছিলেন সারা জীবন পিসিকে কে দেখবে? সেই সময় বাবা দাদুকে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন পিসিকে দেখে রাখবেন। তারপর বাবা চলে যান, আর তাঁর মৃত্যু কিছুদিন পর নিয়মভঙ্গের দিন আমরা পিসিকে হারাই। এই ঘটনা আমাকে খুব অবাক করেছিল। মনে মনে ভেবে ছিলাম বাবা হয়তো পিসিকে নিয়ে চলে গেলেন। আসলে ঘটনাটা কাকতালীয় হলেও এটা আমাকে এই ভাবে ভাবিয়ে ছিল। এই ঘটনার কী ব্যাখ্যা সেটা সত্যিই জানিনা।’
আর পরমব্রত, তিনি পার্নো একসময়কার নায়ক। 'ভোগ'-এ কাজ করতে গিয়ে নায়ককে পরিচালক হিসেবে পেয়ে অনুভূতিটা কেমন ছিল? প্রশ্নে নায়িকার মত, অভিনেতা যখন পরিচালক হন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা বাড়তি সুবিধা থাকে। তাছাড়া পরমের মধ্যেও অনেক বদল এসেছে, আর সেটাই বোধ হয় তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।
পার্নোর কথায়, ‘পরম মানুষ হিসেবে অনেকটা বদলে গিয়েছে। সেই কারণেই বোধহয় ওঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমরা এতটা কমফোর্টেবল মনে হয়েছি। আগে আমরা একসঙ্গে অবশ্যই অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। কিন্তু ওঁর পরিচালনায় কাজ করে আমার খুব ভালো লেগেছে। ওঁর সঙ্গে শুধু এই একবার না বার বার কাজ করতে চাই। আমার কিছু প্রিয় পরিচালক আছেন, সেই তালিকায় পরমের নামও যোগ হয়েছে।’
তবে কেবল ছবি বা সিরিজ নয়। একটা সময় ছোট পর্দাতেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন অভিনেত্রী ‘খেলা’, 'মোহনা' তাঁর সব বিখ্যাত মেগা। তারপরও অবশ্য বহুবছর পর ফের 'কোড়াপাখি'-এর হাত ধরে আবার ছোট পর্দায় ফেরেন নায়িকা সেই মেগাও রীতিমতো হিট হয়। কিন্তু আবার যদি সুযোগ আসতে তবে কী ছোট পর্দায় ফিরবেন নায়িকা? প্রশ্নে তিনি জানান এক্ষেত্রে মোটেই ভেদাভেদে বিশ্বাসী নন তিনি।তাঁর কথায়, ‘হ্যাঁ, আমি যদি ফাঁকা থাকি। দেখি বছরটা ফাঁকাই আছে, খুব বেশি চাপ নেই। কিংবা যদি খুব ইন্টারেস্টিং কিছু চরিত্র পাই তাহলে অবশ্যই করব।’