বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে জাতিগণনার ঘোষণা করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার। ঘটনাচক্রে বিহারেরই প্রথম জাতসমীক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এই মুহূর্তে নীতীশের দল জেডিইউ-র সঙ্গে জোটে রয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, লাগাতার জাতিগণনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বারবার এই দাবিতে সরব হয়েছেন। তাই বিহারে নির্বাচনের আগে মোদী সরকারের জাতিগণনার ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারপরেই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মন্ত্রিসভার বৈঠকে কী কী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানেই জনগণনায় জাতিগণনাকে যুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। অশ্বিনী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আগামী জনগণনার অংশ করা হবে জাতিগণনাকে।' এরপরেই কংগ্রেসকে নিশান করে কেন্দ্রীয় আরও মন্ত্রী বলেন, 'কংগ্রেস সরকার সবসময়ই জাতিগণনার বিরোধিতা করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কোনও জনগণনায় জাতিগণনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০১০ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং লোকসভায় আশ্বাস দিয়েছিলেন যে জাতিগণনা নিয়ে মন্ত্রিসভা বিবেচনা করবে। এই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য মন্ত্রী সদস্যদের একটি দল গঠন করা হয়েছিল। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাতিগণনার সুপারিশ করেছিল। তা সত্ত্বেও তৎকালীন কংগ্রেস সরকার পূর্ণাঙ্গ জাতিগণনার পরিবর্তে কেবল জাতসমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।'
অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও বলেছেন, 'এটা স্পষ্ট যে কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা জাতিগণনাকে কেবল রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কিছু রাজ্য জাতিভিত্তিক জনগণনার জন্য সমীক্ষা করেছে। কিছু রাজ্য এটি ভালোভাবে করলেও, অন্যরা কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অস্বচ্ছভাবে এই ধরনের সমীক্ষা করেছে। এই সমীক্ষাগুলি সমাজে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করে। রাজনীতির দ্বারা আমাদের সামাজিক কাঠামো যাতে বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করতে সমীক্ষার পরিবর্তে জাতিভিত্তিক জনগণনাকে জাতীয় জনগণনার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবে এবং দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত সমাজ ও দেশবাসীর মূল্যবোধ এবং স্বার্থের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে। অতীতের মতো, যখন সরকার সমাজের কোনও অংশকে কষ্ট না দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশের জন্য ১০% সংরক্ষণ চালু করেছিল, এই সিদ্ধান্তও একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির প্রতিফলন।'
কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী জনগণনার অংশ হবে জাতিগণনা। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে কোন জাতির সংখ্যা কত, কোন সম্প্রদায়ের মধ্য়ে কত উপজাতি রয়েছে, তার সব হিসেব থাকবে। ২০২১ সালেই জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। সেই সময় কোভিড মহামারির জন্য জনগণনা পিছিয়ে গিয়েছিল। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে জাতিগণনার দাবিতে কেন্দ্রকে ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ করে চলেছেন রাহুল গান্ধী। চলতি বছরের গোড়াতেই বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উদ্যোগে করা জাতসমীক্ষা মানুষকে বোকা বানানো ছাড়া কিছু নয় বলে অভিযোগ করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। পাশাপাশি, গোটা দেশে ফের জাতিগণনার দাবি নিয়ে ফের সরব হন তিনি। এই আবহে জানা যাচ্ছে, আগামী বছর জনগণনার কাজ শুরু হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। আবার আগামী বছর বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনও। তার আগে এই ঘোষণা কার্যতই এনডিএ সরকারের বড় চমক।