চাকরি জীবনে তিনি বরাবর চর্চায় থেকেছেন কাজের জন্য। যখনই প্রশাসনিক গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন, কোনওরকমের রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করেননি। আপোস করেননি কোনও প্রলোভনের সঙ্গে। ৩৪ বছরের চাকরি জীবনে ৫৭ বার বদলি হওয়ার পর বুধবার বিখ্যাত আইএএস অফিসার অশোক খেমকার অবসর গ্রহণ। ১৯৯১ ব্যাচের হরিয়ানার ক্যাডেট দেশজুড়ে পরিচিত তাঁর সততা এবং নিষ্ঠার জন্য।বর্তমানে অশোক খেমকা হরিয়ানা সরকারের অতিরিক্ত পরিবহণ সচিবের পদে রয়েছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসেই এই পদে বদলি করা হয়েছিল তাঁকে। হরিয়ানা ক্যাডারের এই আইএএস অফিসার ২০১২ সালে প্রথমবার খবরের শিরোনামে আসেন। গুরুগ্রামে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর জামাই তথা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট বঢরার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি জমির লেনদেনের মিউটেশন বাতিল করে দেন তিনি।কলকাতার সঙ্গেও অশোক খেমকার গভীর যোগ রয়েছে। ১৯৬৫ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন অশোক খেমকা। ১৯৮৮ সালে আইআইটি খড়্গপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি টেক করেন তিনি। এরপর টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পিএইচডি করেন। বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিনান্স নিয়ে এমবিএ-ও করেছেন তিনি। চাকরিতে যোগদানের পরও থেমে থাকেননি খেমকা। চাকরি জীবনের মধ্যেই পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন তিনি।হরিয়ানা সরকারের অধীনে কাজ করা আমলাদের মধ্যে সম্ভবত অশোক খেমকাকেই সর্বোচ্চ ৫৭ বার বদলি করা হয়েছে। যে দফতর থেকে তিনি অবসর নিয়েছেন, বছর দশেক আগে সেই পরিবহণ দফতরের কমিশনার পদেই ছিলেন এই আইএএস অফিসার। তখন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিজেপির মনোহরলাল খাট্টার। কিন্তু মাত্র চার মাস পরিবহণ দফতরের কমিশনার পদে থাকার পরই অশোক খেমকাকে বদলি করা হয়েছিল। বর্তমানে এই দফতর মন্ত্রী অনিল ভিজের দায়িত্বে রয়েছে। ২০২৩ সালে অশোক খেমকা নিজেই হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দুর্নীতি দমন বিভাগে কাজের সুযোগ চেয়ে অনুরোধ করেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে অশোক খেমকা লেখেন, ‘কাজের দায়িত্ব ভাগে ভারসাম্য না থাকলে সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হয় না। আমার চাকরি জীবনে সায়াহ্নে এসে আমি ভিজিলেন্স বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করতে চাই, যাতে আমি দুর্নীতিকে নির্মূল করতে পারি। যদি সুযোগ পাই, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হবে। তবে প্রভাবশালী বা ক্ষমতাশালী কাউকেই রেয়াত করা হবে না। উল্লেখ্য, খেমকাকে গোটা চাকরি জীবনে প্রতি ছ মাস অন্তর একবার তাঁকে গড়ে বদলি করা হয়েছে।