২০২৫ সালের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের যাত্রা শেষ। তারা প্রথম দল হিসেবে এই মরশুমের টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল। বুধবার (৩০ এপ্রিল) পঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ঘরের মাঠে হারের পর চেন্নাইয়ের প্লে-অফে পৌঁছানোর সমস্ত আশা শেষ হয়ে যায়। এই প্রথম চেন্নাই দল ঘরের মাঠে টানা ৫টি ম্যাচ হেরেছে। এমএস ধোনির অধিনায়কত্ব সত্ত্বেও, সিএসকে এই মরশুমে ১০টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২টিতে জিততে পেরেছে। আইপিএলের ইতিহাসে এটি সিএসকে-র সবচেয়ে লজ্জাজনক পারফরম্যান্সগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন দলটির এহেন পারফরম্যান্সের কারণ কী? কোথায় পিছিয়ে পড়ল তারা? জেনে নেওয়া যাক-
১. আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের অভাব
আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিং কৌশল পুরোপুরি বদলে গিয়েছে, এখন এই ফর্ম্যাটে মূলত পাওয়ারপ্লে-তেই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দলগুলি। কিন্তু সিএসকে-র ব্যাটিং এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। পাওয়ারপ্লে, মিডল ওভার বা ডেথ ওভার- কোনও পর্যায়েই ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারেননি, ব্যর্থ হয়েছেন তাঁদের কোনও প্লেয়ারের মধ্যে সেই ফায়ার পাওয়ার দেখা যায়নি। আশ্চর্যজনক ভাবে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত, সিএসকে প্রথমে ব্যাট করার সময় একবারও ২০০ রানের গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। অ্যাওয়ে ম্যাচে পঞ্জাবের বিপক্ষে তারা রান তাড়া করতে নেমে এক বারই ২০১ রান করেছিল, কিন্তু সেই ম্যাচটিও তারা হেরে যায়।
২. পাওয়ার প্লে এবং ওপেনিংয়ে ব্যর্থতা
এই মরশুমে বেশির ভাগ দলই পাওয়ার প্লে-র (প্রথম ৬ ওভার) পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে, কিন্তু সিএসকে-র ওপেনিং জুটি শুরু থেকেই নড়বড় করেছে। রচিন রবীন্দ্র, ডেভন কনওয়ে এবং রাহুল ত্রিপাঠির মতো খেলোয়াড়দের সুযোগ দিয়েছিল সিএসকে, কিন্তু কেউই দ্রুত গতিতে শুরুটা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সিএসকে-কে তাদের শেখ রশিদ এবং আয়ুষ মাত্রের মতো তরুণ খেলোয়াড়দের উপর নির্ভর করতে হয়েছে, যাঁরা এখনও অনভিজ্ঞ। তবে, দুই ব্যাটসম্যানই কিছুটা লড়াই করেছিলেন। কিন্তু তাঁরাও এখন পর্যন্ত সেভাবে সফল হতে পারেননি।
এই মরশুমে সিএসকে-র পাওয়ার প্লে রান রেট ছিল মাত্র ৭.৯, যা সমস্ত দলের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এছাড়াও, পাওয়ারপ্লে-তে সিএসকে মাত্র ৬টি ছক্কা মেরেছে, যা অন্যান্য দলের তুলনায় সবচেয়ে কম। সিএসকে-র বল-টু-বাউন্ডারি শতাংশও মাত্র ৫.১, যা সমস্ত দলের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।
৩. খারাপ ফিল্ডিং
এই মরশুমে, সিএসকে কেবল ব্যাটিংয়েই নয়, ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও খুব খারাপ পারফর্ম করেছে। দলটি এখনও পর্যন্ত ১৭টি ক্যাচ ফেলেছে, যা রাজস্থান রয়্যালসের (১৮টি) পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং ধোনিও স্বীকার করেছেন যে, ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতা দলকে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে।
৪. নিলামের কৌশলে ভুল
প্রাক্তন সিএসকে খেলোয়াড় সুরেশ রায়না এবং অনেক বিশেষজ্ঞই চেন্নাই সুপার কিংসের নিলাম কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ৫৫ কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও, সিএসকে কোনও বড় গেম-চেঞ্জার খেলোয়াড় কিনতে পারেনি এবং একটি শক্তিশালী মূল দল তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বড় খেলোয়াড়দের উপর আস্থা প্রকাশ করেছিল, কিন্তু সেই প্লেয়াররা ব্যর্থ হয়েছেন। টপ অর্ডারে রাচিন রবীন্দ্র এবং কনওয়ের মতো খেলোয়াড়দের উপর আস্থা রাখা হয়েছিল, যারা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছেন। মিডল অর্ডারে রাহুল ত্রিপাঠি, দীপক হুডা এবং রবীন্দ্র জাদেজাও ব্যর্থ হয়েছেন।
রায়না এর আগেই বলেছিলেন যে, সিএসকে-র উচিত ছিল ঋষভ পন্ত বা ইশান কিষাণের মতো আক্রমণাত্মক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের উপর বিনিয়োগ করা। একই ভাবে, বোলিংয়েও, নুর আহমেদ এবং খলিল আহমেদ ছাড়া, বিশেষ কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং জাদেজার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রাও ব্যর্থ হন। অন্যদিকে, মাথিশা পাথিরানা বেশ ব্যয়বহুল প্রমাণিত হন এবং উইকেট নিতেও তাঁকে লড়াই করতে দেখা গিয়েছে।
৫. অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন এবং তারুণ্যের উপর কম আস্থা
সিএসকে-র মূল অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় চোট পেয়ে ছিটকে গেলে, ধোনিকে ফের অধিনায়ক করা হয়। কিন্তু তাঁর কৌশলেও কোন স্পষ্টতা ছিল না। দলে ঘন ঘন পরিবর্তন আসছিল, কিন্তু খেলোয়াড়রা তাঁদের ভূমিকা বুঝতে পারেননি। এছাড়াও, সিএসকে তরুণদের কম সুযোগ দিয়েছে। অন্যান্য দলগুলি বৈভব সূর্যবংশী এবং প্রিয়াংশ আর্যের মতো তরুণদের উপর আস্থা দেখিয়েছে, কিন্তু সিএসকে খুব দেরীতেই শেখ রশিদ, আয়ুষ মাত্রে এবং ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের মতো তরুণদের সুযোগ দিয়েছিল।