শেষযাত্রায় প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গান স্যালুট-সহ সমস্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘না’ জানানো হয়েছে আলিমুদ্দিনের তরফে। লাল পতাকায় মোড়া আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এদিন ভেজা চোখের ভিড়। সবার মন কাঁদছে প্রিয় মানুষটার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা। টলিউডের অন্যতম ‘ঠোঁটকাটা’ ব্যক্তিত্ব বিপ্লব চট্টোপাধ্য়ায়ের কাছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু ব্যক্তিগত শোক। প্রাণের বন্ধুর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পুরোনো দিনের ঝাঁপি খুললেন। টিভি নাইন বাংলাকে বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় জানান, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সক্রিয় রাজনীতিতে আসার আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মির্জাপুর স্ট্রিটের এক চায়ের দোকানে প্রথম আলাপ হয় তাঁর। সেই দোকানের চা ছিল বুদ্ধবাবুর ফেভারিট, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ও সেখানে চা খেতে যেতেন।
চা-এর কাপে চুমুক দিতে দিতেই জমে উঠত আড্ডা। বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তারপর তিনি রাজনীতিক হলেন। আমিও অভিনেতা হলাম। আমার সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ল। তিনি ভেবেছিলেন, আমি বুঝি খুব সৎ। দু’-এক জায়গায় এই কথা তিনি বলেওছিলেন আমার সম্পর্কে। যেটা বরাবরই মনে হত, বুদ্ধবাবু রাজনীতিতে না এলেই বোধ হয় ভাল করতেন। আমাদের দেশের এই নোংরা রাজনীতি ওঁর জন্য নয়’।
বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের বিশ্বাস বামদলের অনেক আগেই উচিত ছিল মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর হাতে তুলে দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে যে স্বপ্ন বুদ্ধদেব দেখেছিলেন, তা পূরণ করতে পারেননি। বিপ্লব বাবু জানান, 'আমাকে বলতেন, ‘জানো বিপ্লব, একটা সুন্দর রাজ্য তৈরি করব আমরা। যেটাকে প্রকৃত অর্থেই সুন্দর বলা যায়’।
সংস্কৃতিমনস্ক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের গুণগ্রাহী ছিলেন। দেখতে এসেছিলেন তাঁর নাটক ‘শকুনির পাশা’। অভিনয়ে বিপ্লবকে ‘একশোয় একশো’ দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে সেই মানুষটাকে যোগ্য সম্মান দেয়নি বাংলার মানুষ, আক্ষেপ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের।
আরও পড়ুন-খুব ভালো ক্রিকেট খেলতেন! কলেজে কেমন ছিলেন বুদ্ধবাবু, খোলসা করলেন বন্ধু-প্রতিবেশীরা
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এদিন মানুষের ঢল নেমেছে। বুদ্ধদেবের শেষযাত্রা শেষ হবে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দেহদান করা হবে, যেমনটা বুদ্ধদেব জীবদ্দশায় জানিয়ে গিয়েছিলেন।