হিমাচল প্রদেশের রাজভবন থেকে সরিয়ে দেওয়া হল পাকিস্তানের পতাকা। ১৯৭২ সালে হিমাচল প্রদেশের রাজভবনের কাঠের টেবিলে থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের নারকীয় হামলার পর সেই টেবিলে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের পতাকা।এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শিমলা চুক্তি স্থগিত করার পরই নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন-গুজরাটে বড় অভিযান! ৫৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আটক
পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদে সিন্ধু জলচুক্তি-সহ একাধিক চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। যার পাল্টা জবাবে শিমলা চুক্তি বাতিল করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি বুধবার এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর দেখা যায়, হিমাচলের রাজভবনের টেবিল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের পতাকা। সেখানে দুটি চেয়ার রাখা হয়েছে। সেখানে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার ভুট্টোর ছবি রয়েছে। রাজভবনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, টেবিলে পাকিস্তানের পতাকা নেই। তবে কীভাবে এটা হল তা এখনও জানা যায়নি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি। টেবিলের উপর একটি ফলকে লেখা রয়েছে, 'শিমলা চুক্তি এখানে ৩-৭-১৯৭২ তারিখে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।' এলাকাটি পিতলের রেলিং দিয়ে ঘেরা।এতদিন টেবিলের উপর ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা একসঙ্গে রাখা ছিল, কিন্তু এখন শুধু ভারতের পতাকাই দৃশ্যমান।
সিমলা চুক্তি কী?
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ৯০,০০০-এর বেশি পাকিস্তানি সেনা পূর্ব ও পশ্চিম ফ্রন্টে দুই সপ্তাহ যুদ্ধের পর আত্মসমর্পণ করে। এই ঘটনা পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি এবং ভারতের জয়ের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। যার ফলে বাংলাদেশের জন্ম হয়। শিমলা চুক্তি ছিল ইন্দিরা গান্ধী এবং জুলফিকার আলি ভুট্টোর মধ্যে ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তি। এর লক্ষ্য ছিল 'দুই দেশের মধ্যে সংঘাত ও মুখোমুখি অবস্থানের অবসান ঘটানো এবং উপমহাদেশে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা।' এই চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা দুই দেশের সেনাবাহিনীর অবস্থানের সীমানা নির্ধারণ করে। অতীতে পাকিস্তান এই চুক্তি বারবার লঙ্ঘন করেছে।নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই চুক্তির। দক্ষিণের মানাওয়ার থেকে উত্তরের কেরান পর্যন্ত সবটাই এই চুক্তির আওতায়। এছাড়া হিমবাহ আচ্ছাদিত এলাকাও এর মধ্যেই পড়ে। চুক্তি অনুযায়ী দু’দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। শান্তি বিঘ্নিত করতে কোনও তরফে কোনও উসকানি দেওয়া যাবে না। শান্তি বজায়ে পারস্পরিক সমন্বয় রাখতে হবে। চুক্তির এসব শর্ত যে কখনও ভাঙা হয়নি, তা নয়। বারবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। তা প্রতিহত করেছে ভারতীয় সেনা। ১৯৮৪ সালের সিয়াচেন এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের সময়ে শিমলা চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। এবার, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সেই চুক্তি বাতিল করে প্রকারান্তরে যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দিল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আরও পড়ুন-গুজরাটে বড় অভিযান! ৫৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আটক
পাকিস্তানের চুক্তি স্থগিত
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পর পাকিস্তান ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর শিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে। ইসলামাবাদ সিন্ধু জল চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত জল প্রবাহে কোনও পরিবর্তনকে 'যুদ্ধের কাজ' হিসেবে গণ্য করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পাকিস্তান বাণিজ্য, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, আকাশসীমা এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড় স্কিমের (এসভিইএস) অধীনে সমস্ত ভিসা স্থগিত করেছে, যদিও শিখ তীর্থযাত্রীদের এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।