কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জেরে পাকিস্তানিদের অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নির্দেশিকা হাতে পেয়েছেন ওড়িশার এক প্রৌঢ়া এবং এক বৃদ্ধাও। এঁদের মধ্যে একজন গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের বাসিন্দা। অন্যজনের দাবি, তাঁর জন্মই হয়েছে ভারতে! দু'জনেরই বক্তব্য, তাঁরা কিছুতেই ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে যাবেন না। এই নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।
এঁদের মধ্য়ে একজন হলেন ৫৫ বছরের সারদা। তাঁর পাসপোর্ট বলছে, ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে তাঁর জন্ম হয়েছিল। অর্থাৎ - এই নথি অনুসারে, তিনি এখনও পাকিস্তানি।
অন্যদিকে সারদা জানিয়েছে, তাঁর বাবা ১৯৮৭ সালে পরিবার নিয়ে ৬০ দিনের ভিসায় ভারতে এসেছিলেন। পরে এই পরিবারটি ওড়িশার কোরাপুট জেলায় পাকাপাকিভাবে থেকে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সারদার বিয়ে হয়। সারদা বাই থেকে তিনি হয়ে যান সারদা কুকরেজা। সেও প্রায় ৩৫ বছর আগের ঘটনা।
সারদার দাবি, তিনি গত ৩৫ বছর ধরে বারবার ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। অথচ, সেই নাগরিকত্ব তিনি পাননি। অথচ, তাঁর আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড আছে! সেটা কীভাবে সম্ভব, তার সদুত্তর যদিও পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে সারদার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই নাতিনাতনিও আছে। তাঁরা সকলেই ভারতীয়। সারদার বক্তব্য, পাকিস্তানে তাঁর কেউ নেই। কখনও ফোনে পর্যন্ত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাহলে তিনি কীভাবে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে যাবেন?
সারদা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন, যাতে তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না করা হয়। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, সারদার কাছে না তো লং টার্ম ভিসা (এলটিভি) আছে, না অন্য কোনও বৈধ নথি। সেই কারণেই তাঁকে ভারত ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ করা হবে।
একই বিপদে পড়তে হয়েছে ৭২ বছরের রাজিয়া সুলতানাকে। বালেশ্বরের এই প্রবীণ বাসিন্দাকেও অবিলম্বে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় হতবাক রাজিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। কারণ, তাঁদের দাবি - রাজিয়া ভারতের মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন। তার প্রমাণও রয়েছে। তাহলে তাঁকে কেন ভারত ছাড়ার নোটিশ পাঠানো হল?
জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধা এমনিতেই নানা অসুখে ভুগছেন। তার উপর এই নোটিশ পাওয়ার পর থেকে ভয়ে খাওয়া, ঘুম ত্যাগ করেছেন! ফলে ক্রমশ আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, রাজিয়া সুলতানার বাবা ছিলেন হায়দর আলি। তিনি বিহার ও কলকাতায় থাকতেন। বিয়ে করেছিলেন ওড়িশার মেয়েকে। রাজিয়া সুলতানার জন্ম হয় ১৯৫৩ সালে - কলকাতায়। পরে তাঁর বিয়ে হয় ওড়িশার বাসিন্দা শেখ সামসুদ্দিনের সঙ্গে। যিনি আজ আর জীবিত নেই।
পরবর্তীতে রাজিয়ার বাবা বাংলাদেশ চলে যান। পরে সেখান থেকে পাকাপাকিভাবে পাকিস্তান চলে যান তিনি। সেখানকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু, রাজিয়া কোনও দিন পাকিস্তানে যাননি বা সেদেশের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কও নেই। তাঁর ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ডেও সেই তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজিয়া সুলতানার মেয়ে সালমা পরবিন। তাঁরা প্রশাসনের কাছে এই নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।
ওড়িশা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে মোট ১২ জন 'পাকিস্তানি নাগরিক'কে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।