প্রশ্ন: খাদান-সন্তানের লড়াইয়ে ‘৫ নম্বর স্বপ্নময় লেন’-কে সামিল না করালে কি বক্স অফিসের ছবিটা আপনাদের জন্য অন্যরকম হত?
উত্তর: না না, আমার ছবি আমার মতো চলবে। ‘খাদান’ ‘খাদান’-এর মতো, ‘সন্তান’ ‘সন্তান’-এর মতো। কারও ঘরানার সঙ্গে তো কারও মিল নেই। অনেকেই আছেন, যারা সব বাংলা ছবি দেখেন। তাঁরা অবশ্যই আগে দুটো বড় বাংলা সিনেমা দেখবেন। মানে বড় হাউজের ছবি। তারপর আমাদের ছবি দেখবেন। কখনও আমি তাঁর কাছে তিনে থাকব, কখনও আবার ‘চালচিত্র’ তিনে। এ নিয়ে কোনও আক্ষেপও নেই, কোনও অভিমানও নেই। আমার শুধু মনে হয়, এই চারটে বাংলা ছবির সঙ্গে যদি হিন্দি সিনেমা এত প্রায়োরিটি না পেত, তাহলে ভালো হত। এবার হল মালিকদের কথাও ঠিক, সবসময় কি বাংলা ছবি ব্যবসা দেয়! হিন্দি সিনেমাই তো বাঁচিয়ে রেখেছে!
এই বাকবিতণ্ডা থাকবেই। আমরা জানতাম আমাদের ছবি লাগতে (শো পেতে) সময় লাগবে, সেই চার-পাঁচটা দিন আমাদের দাঁতে দাঁত চেপে লড়তে হয়েছে। গতকাল থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের সিনেমা মানুষের ভালো লেগে গিয়েছে।
প্রশ্ন: খাদান দেখতে গিয়ে ঢাকঢোল পেটানো, আপনার ছবির দর্শকদের অসুবিধা নিয়ে লেখা ফেসবুক পোস্ট তো খুব ভাইরাল।
উত্তর: হ্যাঁ অনেকেই ভুল বুঝেছেন। ভাবছেন আমি দেবের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কেউ এমন কথাও লিখেছেন, ‘দেবকে হিংসে করছ! আগে বড় বড় অভিনেতাদের ভালোবাসতে শেখো’। আমার বক্তব্য ছিল, একজন মানুষকে ভালোবাসা ভালো, সেই ভালোবাসার প্রকাশও ভালো। কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশ করতে গিয়ে যদি অন্যের ক্ষতি হয়, তাহলে সেরকম ভালোবাসা যাকে দেখাচ্ছ, তিনিও চাইবেন কি? আমার তো মনে হয় চাইবেন না।
প্রশ্ন: দেবের সঙ্গে কথা হয়েছে তারপর?
উত্তর: হ্যাঁ হয়েছে। দেব আমাকে বলেছে ‘কে কী বলছে এটা নিয়ে কিছু মনে কোরো না দিদি। তুমি তো জানো, তোমার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক। আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো। তুমিও জানো, আমি তোমাকে কতটা সম্মান করি। তাই কে কী বলল এতে কান দেওয়ার দরকার নেই। তুমি তোমার কাজটা করেছ মন দিয়ে, ফল তুমি পাবেই।’
প্রশ্ন: খাদানের জন্য অন্য কোনও বাংলা সিনেমা হল পাচ্ছে না শোনা যাচ্ছে, আপনারও কি সেটাই মত?
উত্তর: দেখো আজকে যেমন বুক মাই শো খুলে দেখলাম, একটা হলে সন্তান ৩টে শো, খাদান ২টো শো। দেব এখন বাংলা ছবির সুপারস্টার। এটা তো মানতে হবে। কমার্শিয়াল সুপারস্টার। আমি কিন্তু ১ থেকে ৯৯ অবধি বুম্বাদাকে রাখছি। ওঁর তো অন্য ঘরানা। বুম্বাদা, মিঠুনদা, চিরঞ্জিতদা, এঁরা তো আর এই জেনারেশনের আলোচনায় আসবেন না। এবার যদি এই জেনারেশনের কথা ভাবি, দেব ১ নম্বরে, এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। যেভাবেই হোক, ও নিজের জায়গা ধরে রেখেছে, কখনও হিট, কখনও ফ্লপ। যাই হোক। বাংলা ছবির এই খরার সময়, কমার্শিয়াল সিনেমা বানানোর ঝুঁকি তো নিয়েছে। এটা দেব ছাড়া কে পারত…
প্রশ্ন: কিন্তু কমার্শিয়াল ছবি তো জিৎ পরপর বানাচ্ছেন, হতে পারে সেগুলো নিয়ে এমন উন্মাদনা হয়নি।
উত্তর: না না আমি চলার কথা বলছি। শুধু বানালে হয় না, সেগুলো চালাতে হয়। এখন যেখানে মানুষরা সাউথের ছবি, জাওয়ান-পাঠান-সিংঘম দেখছে, এগুলো দেখতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সেখানে বাংলা কমার্শিয়াল ছবি চালাতে গেলে, তোমাকে ভাবতে হবে প্রচারের কথা। দেব যেভাবে প্রচার করেছে, বাসে করে ঘুরে ঘুরে গোটা বাংলার ঘরের মধ্যে প্রায় ঢুকে গিয়েছে। সেরকম প্রচার জিৎ করেছে বলে তো আমার মনে নেই বা চোখে পড়েনি। মনে রাখতে হবে, দেব যে মানুষগুলোকে ধরেছে, তারা কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিন দিয়ে ছবি হিট করানোর দর্শক। দেব ঠিক জায়গায় গিয়ে সেই দর্শকদের ধরেছে। ঠিক বুঝতে পেরেছে, কমার্শিয়াল এই অ্যাসপেক্টে চোখ তৈরি হয়েছে বাঙালি দর্শকের। আর ঠিক সেটা ধরেই ও ছবি বানিয়েছে। সফলও হয়েছে।
খাদান নিয়ে কেউ বলছে কেন স্লো মোশনে মারামারি হল। কেন ইধিকা স্লিভলেস ব্লাউজ পরল। তবে এগুলো না ম্যাটার করছে না। কারণ যে ব্যবসা করছে, সেটাই আসল। যেটা বহুরূপী করে গেল, শিবু দেখিয়ে দিয়ে গেল। অন্যরকম ঘরানার ছবি দিয়েও ১৫ কোটি আনা যায়, দেব তো সে পথই ধরেছে। ও বরং হারিয়ে যাওয়া একটা ঘরানা ফিরিয়ে এনেছে। দেব কমার্শিয়াল অ্যাঙ্গেল ফেরাতে চাইছে, যেটা বর্তমানে টলিউডের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।


প্রশ্ন: তাহলে বলছেন দর্শকরা চাইছে বলেই বেশি শো পাচ্ছে?
উত্তর: সেটাই তো স্বাভাবিক। খাদান বেশি শো পাবে না? কে পাবে তাহলে স্বপ্নময় লেন বা চালচিত্র পাবে? খাদানের পরই সন্তান আছে। সেখানে রাজ আছে, মিঠুনদা, অনুসূয়াদি, ঋত্বিক, সর্বোপরি এসভিএফ আছেন। তারপর পড়ে রইল চালচিত্র আর স্বপ্নময় লেন। আমাদের নতুন হাউজ, নতুন ডিরেক্টর। পরিচালকের ঝুলিতে একটি মাত্র ছবি (এটা আমাদের গল্প), হতে পারে সেটি হিট করেছে। অভিনেতা যারা আছেন তাঁদের কারওরই ওই স্টার তকমাটা নেই।
প্রশ্ন: কিন্তু এটা তো সত্যি, পরিচালক মানসী সিনহার উপর দর্শকের একটা ভরসা তৈরি হচ্ছে।
উত্তর: হ্যাঁ সেটা বলতে পারো। স্বপ্নময় লেনের এইটুকুই আছে। আমি তো পাগলের মতো হল ভিজিট করছি, সেখানে প্রত্যেকটি মানুষ আমাকে বলছে, আপনি নিজের ঘরানা তৈরি করেছেন। মানসী সিনহার ছবি মানেই আমাদের আলাদা এক্সপেকটেশন তৈরি হয়ে গেল। এটা আমার কাছে মনে হচ্ছে যেমন প্রাপ্তি, তেমন চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: আপনি আলাদা কী দেখাচ্ছেন, যেটা দর্শকরা অন্য কোথাও পাচ্ছেন না?
উত্তর: আলাদা কি না জানি না! তবে আমি যেটা বিশ্বাস করি সেটা দেখাই। মানুষ আমার ছবিতে নিজেকে দেখতে পায় পর্দায়। আমার সিনেমায় কোনও চরিত্র লার্জার দেন লাইফ নেই, কিছু ভাবনা আছে যেটা লার্জার দ্যান লাইফ। স্বপ্নময় লেনের শেষে এসে একজন আমায় বলছে, ‘আমাকে চিনতে পারছেন?’ তারপর বলল ‘এটা আমাদের গল্প’ দেখে সে ঠিক করেছিল মায়ের বিয়ে দেবে। আর স্বপ্নময় লেন সে দেখতে এসেছে মা ও মায়ের নতুন স্বামীর সঙ্গে। এর থেকে বড় পাওয়া একজন পরিচালকের আর কী বা হতে পারে, যখন আমার সিনেমা কারও জীবন বদলাচ্ছে!

প্রশ্ন: অভিনয় করছেন এত দিন ধরে, পরিচালনায় আসতে এত সময় লেগে গেল কেন?
উত্তর: আমি তো ভাবিনি কখনও পরিচালনা করব। এ তো আমার মা আমাকে দিয়ে জোর করে করালেন। বারবার বলতেন, আমি জানি তুমি পারবে। আর দুঃখের ব্যাপার আমার বানানো প্রথম সিনেমা আসার আগেই তিনি চলে গেলেন। দেখে যেতে পারলেন না।
প্রশ্ন: নিজের পরিচালনায় কাজ করার ইচ্ছে আছে?
উত্তর: না না, আমি নেবই না অভিনেত্রী মানসি সিনহাকে। হাঁটুতে ব্যথা, বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। একটুও ফ্লেক্সিবল নেই এখন আর। সর্বোপরি পরিচালক মানসী সিনহা যদি মনিটরে বসে দেখতে না পারে, তাহলে সিনেমা বানাতেই পারবে না।
প্রশ্ন: ‘এটা আমাদের গল্প’ চলেছিল ৮০ দিন মতো। সেই রেকর্ড কি…
উত্তর: না ওটা ৮২ দিন। আমি এখন কিছু বলতে পারব না। তবে মানুষ যা বলছে, তাতে মনে হচ্ছে এই ছবিটারও টান আছে। এখন দেখা যাক।