গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে জামাত-ই-ইসলামিও। ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য গড়ে ভোটে লড়ার চিন্তা করছে পাকিস্তানপন্থী জামাত। একই লক্ষ্যে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামি আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। এবার তাঁর উদ্যোগে শামিল হয়েছে আরও চারটি ইসলামি দল।যার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস। এর আগে বরিশালে চরমোনাইয়ের পীরের সঙ্গে এক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামির আমিরও ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার উদ্যোগে একমত হয়েছিলেন।
রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টনে ইসলামি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইসলামি দলগুলির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম, জাতীয় নির্বাচন-সহ সে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে, নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের আসনভিত্তিক একক প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কথা হয়েছে।উল্লেখ্য, ‘সমমনা ইসলামি দলসমূহ’ নামে ছয় দলীয় একটি জোট আছে। এই চারটি দল সেই জোটের শরিক। যদিও এ বৈঠকে জোটের শরিক দুটি দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (একাংশ) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনকে ডাকা হয়নি। ইসলামি আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কাছাকাছি আসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে জনগণের প্রত্যাশাও আছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করা। কিন্তু এক্ষেত্রে বড় সমস্যা হল বড় দলগুলির প্রলোভন। তাদের কারণে ছোট দলগুলির বিকাশ হতে পারে না। এখন আমরা যদি নীতির ওপর অটল থাকতে পারি, তাহলে সুযোগ আছে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার।’ সূত্রের খবর, ইসলামি দল ছাড়াও আরও কিছু দলের ভোটও ‘এক বাক্সে’ আনার চেষ্টা রয়েছে ইসলামি আন্দোলনের। এই লক্ষ্যে নুরুল হকের গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গেও তারা বৈঠক করেছে। আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে শীঘ্রই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। (আরও পড়ুন: ভারতের সঙ্গে অলআউট যুদ্ধ হলে পাক আর্মির কী হবে? CIA রিপোর্টে যা দাবি করা হয়েছিল)
প্রায় ৩৫ বছর পর বাংলাদেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি দল আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একসঙ্গে বসল। এর আগে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের পর ‘ইসলামি ঐক্যজোট’ নামে ইসলামি দলগুলির একটি জোট হয়। সেখানে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের খেলাফত মজলিস, চরমোনাইয়ের পীর ফজলুল করীমের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ছিল। অন্যদিকে, গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় সাড়ে ১৫ বছর পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে ইসলামপন্থী জামাত। ভোটের ময়দানে নামতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করে দিয়েছে জামাত। এরমধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। এই ভাবেই ইসলামপন্থীদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে চায় বলে জানিয়েছে জামাত। বিশেষ করে নির্বাচনী ঐক্য।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুরে জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ হলেন নদিয়ার ঝন্টু আলি শেখ
এর আগে জনগণের ভোটদানে বাংলাদেশে মসনদে বসেছে বিএনপি, আওয়ামি লিগের মতো রাজনৈতিক দল। কিন্তু জামাত বা ইসলামি দলগুলি মৌলবাদী সংগঠন। নির্বাচনে লড়াই করলেও খুব বেশি আসনে জিততে পারেনি তারা। হাসিনার আমলে খুব বেশি প্রভাবও বিস্তার করতে পারেনি জামাত। কিন্তু বাংলাদেশের এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর এখন ক্ষমতায় মহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। জামাতের উপর থেকে তৎকালীন হাসিনা সরকারের জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছে একাধিক জঙ্গি নেতাও।