যে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল আগামী ১ মার্চ (২০২৫) থেকে, এখন সেই পরীক্ষাই শুরু হবে তার তিনদিন পর - অর্থাৎ - আগামী ৪ মার্চ থেকে। কিন্তু, কেন এই সিদ্ধান্ত?সূত্রের দাবি, একটি নির্দিষ্ট কলেজের কয়েক অধ্যাপকের 'বিশেষ অনুরোধ' করা হয় এবং সেই 'বিশেষ অনুরোধ'-এর ভিত্তিতেই কলেজের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো হয় 'বিশেষ আবেদন'! এবং সেই আবেদন মঞ্জুরও হয়ে যায়। যার জেরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা প্রায় ১৫০টি কলেজের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তার ভিত্তিতে পরীক্ষার নির্ঘণ্ট সংক্রান্ত পুরোনো নির্দেশিকা বাতিল করে জারি করা হয় নতুন বিজ্ঞপ্তি!কিন্তু প্রশ্ন হল, কী এমন ঘটে গেল, যার জন্য প্রায় ১৫০টি কলেজের পরীক্ষার ঘোষিত নির্ঘণ্টই পিছিয়ে দেওয়া হল? অভিযোগ, কেবলমাত্র রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানের জন্যই নাকি এই ব্যবস্থা। বিরোধীরা এর বিরুদ্ধে সরব হলেও নির্লিপ্ত শাসকশিবির। তাঁরা দেখাচ্ছেন পালটা যুক্তি! সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ১ মার্চ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলিতে স্নাতকস্তরের পরীক্ষা (জিই-১) শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সেই নির্ঘণ্ট বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আর, সেই অনুসারে - এবার ওই পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ৪ মার্চ থেকে।এই প্রসঙ্গে, বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই কী বলছে? তাদের দাবি, আগামী ১ মার্চ কলকাতায় 'পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সমিতি' (WBCUPA)-এর একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গিয়েছে। এবং ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত কলেজগুলি থেকেও অধ্যাপকরা কলকাতা যাবেন। সেই কারণেই ১ মার্চের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।এ তো গেল বাম ছাত্র সংগঠনের দাবি। কিন্তু, প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত বিবেকানন্দ কলেজের টিচার ইনচার্জ অনিমেষ দেবনাথের গলাতেও। টিভি নাইন বাংলা পোর্টাল-এ তাঁর যে বয়ান সামনে এসেছেন, তা হল - '১ মার্চ কলেজের অধ্যাপকরা কলকাতায় অনুষ্ঠানে যাবেন বলে আমাকে জানান। কলেজে অধ্য়াপকরা না থাকলে পরীক্ষা পরিচালনা করবেন কারা? আমরা এ নিয়ে একটি বৈঠক করি। তারপরই ঠিক হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পরীক্ষা বাতিলের জন্য আবেদন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ১ মার্চের বদলে ৪ মার্চ পরীক্ষার দিন ঠিক করেছে।'বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন এসএফআই-এর পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক উষশী রায়চৌধুরী। সংবাদমাধ্যমে তিনি অভিযোগ করে জানিয়েছেন, আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠানের জন্য পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না বলেই মনে করছে এসএফআই নেতৃত্ব।ঘটনার সমালোচনা করেছেন শাসকবিরোধী অধ্যাপক সংগঠন 'বর্ধমান ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন' (BUTA)-এর সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর গোস্বামীও। তাঁর প্রশ্ন, একটিমাত্র কলেজের কিছু অধ্যাপকের এমন আজব দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানতে পারে কীভাবে?বস্তুত, বিরোধীরা মনে করছে রাজনীতির স্বার্থে যত বেশি এই ধরনের পদক্ষেপ করা হবে, তাতে আখেরে শিক্ষাব্যবস্থা, পড়ুয়া ও পরীক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হবে।যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, পড়ুয়াদের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবেই নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।