প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন এই সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, দেবী মনস্কামনা পূর্ণ করেন। যে যা চাইবেন, তাই পাবেন। শ্রীরামকৃষ্ণদেব, মা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ, প্রেমানন্দ মহারাজের স্মৃতিধন্য গ্রামে সেই পুজোর দিন এবার এগিয়ে এল। ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়া। তার আগেই দেবী সিদ্ধেশ্বরীর পুজোয় মাতবে আঁটপুরের মানুষ। শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত গ্রামবাসীরা।
দেবীর ডান হাতে অভয়, বাঁ হাতে খড়া ও অন্য হাতে কাটা মুণ্ড, দেখলে ভয় নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস জাগে, ভক্তি জাগে। রাজবল্লভী মায়ের মতোই আমিশ ভোগ নিবেদন করা হয় দেবী সিদ্ধেশ্বরীকে। রাজবল্লভী দেবীর মতো ভোগে মাছ সহ হরেকরকম সবজি খান দেবী। স্থানীয় ভাষায় এই ভোগের নাম ঘাঁটা। আমরা সবাই জানি যে মহাদেবের অপর নাম সিদ্ধেশ্বর, এই নাম থেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর নাম এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই দেবীকে সিদ্ধেশ্বরী অথবা শ্বেতকালী বলেও স্মরণ করে থাকেন। কারণ এই কালী মূর্তির গায়ের রং কালো নয়, সাদা।
কথিত আছে, জাঙ্গিপাড়ার আঁটপুরের দেবী সিদ্ধেশ্বরী ও পাশের গ্রাম রাজবলহাটের দেবী রাজবল্লভী দুই বোন। বড় বোন রাজবল্লভী ও ছোট বোন দেবী সিদ্ধেশ্বরী। দুই দেবীরই গায়ের রং সাদা। গড় ভবানীপুরের রাজা সদানন্দ রাজবলহাটের রাজবল্লভী দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। গড় ভবানীপুরের রানি ছিলেন তারা দেবী। তাঁকে নাকি মা সিদ্ধেশ্বরী স্বপ্নাদেশ দিয়ে, আঁটপুরে তাঁর প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। কোন রূপে পূজিত হবেন দেবী? স্বপ্নেই নাকি জানিয়েছিলেন তা।
দেবী বলেছিলেন, পূর্ণিমার চাঁদের মতো যেন রূপ হয় তাঁর। রানি তারা দেবীর কথা অনুযায়ী একই রূপে মাতৃমন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। টেরাকোটার মন্দির তৈরি হয়। ওই মন্দির সংলগ্ন বিশাল জমিও দেবীর নামে দান করা হয়। আগে অষ্টধাতুর মূর্তি ছিল। কিন্তু ওই চুরির ইতিহাস এখানেও বর্তায়। জানা যায়, ১৪০০ বঙ্গাব্দে এই প্রাচীন মন্দিরটি ভগ্নদশা আরও এক বিপর্যয় ডেকে আনে। চুরি হয়ে যায় অষ্টধাতুর মূর্তি। দেবীর অভিশাপের ভয়ে, আশীর্বাদের আশায় গ্রামবাসীরাই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন। ১৪২০ সালের ৮ জ্যৈষ্ঠ দেবীর নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয়। চতুর্ভুজা শ্বেতকালীর এই মূর্তি পাথরের।
প্রসঙ্গত, ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার আঁটপুরে দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালীর পুজো। এরপর অক্ষয় তৃতীয়ার দিন, বুধবার বার্ষিক পুজো ও সংস্কার করা হবে। এরপর মন্দির সংলগ্ন প্রাচীন শিব মন্দিরের দ্বার উদঘাটন করা হবে। গ্রামবাসীরা মন্দিরের দুই পাশে দুই শিবমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ। আসছে ১৬ বৈশাখ এই দুই মন্দির পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা হবে।